সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন

শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন

প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। সোমবার এ শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

এ শিক্ষাক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো এতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষার চেয়ে ক্লাসে মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবে না কোনো পরীক্ষাভীতি। সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক-এর ফলে বন্ধ হবে কোচিং ও গাইড বাণিজ্য। মুখস্থনির্ভর শিক্ষার বদলে প্রায়োগিক শিক্ষা গুরুত্ব পাবে। দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি বিজনেস স্টাডিজ নিয়ে পড়বে তা ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে, যা বর্তমানে নবম শ্রেণিতে নির্ধারিত হয়। এর পরিবর্তে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে।

এটিও একটি ভালো প্রস্তাব বলে মনে করি আমরা। কারণ দেখা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভাগ নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। উচ্চতর স্তরে গিয়ে অনেকেই বিভাগ পরিবর্তন করে। ফলে এ বিভাগ নির্বাচন খুব একটা কার্যকর হয় না; কর্মক্ষেত্রে কমই কাজে লাগে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এইচএসসি পরীক্ষা হবে দুবার। প্রথমবার একাদশ শ্রেণিতে, দ্বিতীয়বার দ্বাদশ শেণিতে।

দুই পরীক্ষার নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করা হবে। আর এসএসসি পরীক্ষা হবে বর্তমানের তুলনায় অর্ধেক নম্বরে। প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা স্কুলেই হবে, বাকি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেবে শিক্ষা বোর্ড। সব মিলে বলা যায়, প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার একটি প্রয়াস রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়নই বড় বিষয়।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হবে, এটাই স্বাভাবিক। সে জন্যই শিক্ষাক্রমে আনা হয় পরিবর্তন। অতীতেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিমার্জন হয়েছে। তবে এবারের পরিবর্তন যে সবচেয়ে বড় তাতে কোনো সন্দেহ নেই-বলা যায় আমূল পরিবর্তন। বস্তুত বিদ্যমান শিক্ষাক্রমে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে মুখস্থনির্ভর লেখাপড়ায় অভ্যস্ত হয়, তাতে প্রকৃত জ্ঞানার্জন খুব বেশি হয় না। এ শিক্ষাব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীকে মানবিক হতেও সহায়তা করে না। তাই এর পরিবর্তন জরুরি ছিল। তবে এজন্য শুধু শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট নয়; শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ-এসব দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয়-ক্লাসের শিক্ষাটা সঠিক ও উপযুক্ত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা হবে সবচেয়ে বড়।

প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী বছর নির্ধারিত কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তরে প্রথম এবং মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৩ সাল থেকে এ দুই শ্রেণি এবং দ্বিতীয় ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই চালু হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা কাম্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877